ধারাবাহিক গল্প : পলাশী ও আমি (দ্বিতীয় পর্ব)

 পলাশী আমি  

কাবেরী তালুকদার 

  • আগে যা ঘটেছে : লেখিকা বেড়িয়েছেন তাঁর কলেজের সহপাঠীদের সাথে এক্সকার্সানে। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে চেপে এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে চলেছেন তিনি…

Img Loading…



 অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরে সর্বাধিক বাৎসরিক ভিউপ্রাপ্ত লেখাটির জন্য থাকবে আকর্ষণীয় উপহার, এছাড়া সর্বাধিক কমেন্টপ্রাপ্ত লেখাটির জন্য রয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায় সরাসরি জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ। আপনিও লেখা পাঠাতে পারেন উপরের মেনুবারে দেওয়া অপশনে  গিয়ে। বিশদে জানতে যোগাযোগ করুন এই নম্বরে: 8013850709

  বিনোদনের তিন দিন : 

সোমবার
কাবেরী তালুকদারের “পলাশী ও আমি”
মঙ্গলবার
দেবদাস কুুুণ্ডুর “মুখোমুখি”
বুধবার
শৌভিক দে-র ছোট গল্প ও কমিক সিরিজ

  • অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তর
  • আপডেট : Happy New Year 2021
  • শৌভিক দে

লেখিকার বিষয়ে কিছু কথা :
(শীগ্রই জানবেন)


ছেলেটি শুরু করলো,
— এখানে অনেকেই মুর্শিদাবাদ যাচ্ছেন। সবাই জানেন মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার জন‌্য সিরাজের পতন হয়েছিল। মানে ভারতবর্ষ পরাধীন হয়েছিল। আসল কারন কিন্তু কেউ জানেন না। ভারতবর্ষ পরাধীন হবার কারণ মাত্র দুটি টাকা। সিরাজ সেটি দেননি একজন সৈন্যকে। 
আমরা সবাই অবাক! বলে কি? এ তো নতুন ইতিহাস শোনাচ্ছে! এবার ছেলেটি বললো, 
— শুনুন সেই আসল ঘটনা। মোটামুটিভাবে সবাই চুপ। মধ্যরাত্রে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সবাই উদগ্রীব।সিরাজ পলাসীর মাঠের নিজের তাঁবু থেকে দূরবীন দিয়ে দেখলেন ক্লাইভ অপর প্রান্তে কামান ফিট করছে। বেশ কয়েকটা কামান। সিরাজ বুঝলেন একা দলমাদল কামান দিয়ে সামলানো যাবে না। কি করা! মদনলালকে ডেকে দেখালেন। দুজনে ভাবতে লাগলো কি করা যায়! হঠাৎ মদনলাল বললো,
— চিন্তা করবেন না। এমন কামানের ব্যবস্থা করবো যে ক্লাইভ দেখেই উল্টো দিকে দৌড় দেবে যুদ্ধ ছেড়ে।
মদনলাল প্রায় শ’খানেক প্রায় বৃদ্ধ সৈনিক নিয়ে এলো।উবু করে আরাম করে বসালো। তাদের উপর রোগা রোগা কিছু ভিখারী টাইপ লোক, পা দুটো বসে থাকা সৈন্যদের মাথার উপর দিয়ে, মাথাটা পিঠে দিয়ে শুইয়ে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। দূর থেকে মোটামুটি কামান মনে হচ্ছে। দেখে শুনে ক্লাইভের মাথা খারাপ। এত কামান একসঙ্গে দাগলে তো আমরা মূহুর্তে ঊড়ে যাবো! কি করা যায়? আর রাতারাতি এত কামান এলো কোথা থেকে? বার বার দূরবিন দিয়ে দেখছে। হটাৎ মনে হলো একটা কামানের নল যেন নড়ছে! ভালো করে দেখলো। হ্যাঁ, বারে বারে নড়ছে,
— গুপ্তচর, যাও তো, দেখে এসো ব্যাপারখানা কি! গুপ্তচর এলো, দেখলো, জানলো, ফিরে গিয়ে আসল তথ্য জানালো এবং যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়, স্বাধীনতার অস্তগমন। কিন্তু এটা হতো না। ঐ লম্বা হয়ে শুয়ে থাকা লোকটি বার বার বলেছিলো,
— হুজুর, আমার পায়ে দাদ আছে, খুব চুলকোয়। যদি দুটো টাকা দেন তবে ‘এই আমার’ কোম্পানীর একটা দাদের মলম কিনে পায়ে লাগাই।
, বলেই ছেলেটি কাঁধের ব্যাগ থেকে মলম বার করলো, বললো,
— কিন্তু সিরাজ মোটেও পাত্তা দেয়নি তার কথা। এত আয়োজন সত্ত্বেও হেরে ভুত। দুশো বছরের পরাধীনতা। কিন্তু আপনারা যেন এমন ভুল করবেন না। লজ্জা ভয় ত্যাগ করে সময় থাকতে কিনে রাখুন। সপ্তাহান্তে বাড়ি ফিরি এই ট্রেনে এটা বিক্রি করতে করতে। 
কমলদা বলে উঠলো, 
— দাদা দেখছি গুরুদেব লোক। আসুন, আসুন। এই জায়গা দে। আমার গুরু বসবেন।

এবার তো আরো মজা! ইতিমধ্যেই অবস্থা দারুন জমে উঠেছে। দেখলাম, কমলদা মাঝে মাঝে সাধুবাবাকে খোঁচা মারছে আর জিজ্ঞেস করছে,
— আপকা লাড্ডু ঠিক হ্যায় তো?
আমরা ব্যাপারটা ঠিক বুঝছি না। রাত দুটো, কৃষ্ণনগর। বেশ অনেকক্ষন গাড়ি থামে। অনেক যাত্রী নেমে গেলেন। প্রায় খালি, প্রচুর সার জায়গা। কিন্তু, এত আরাম ছেড়ে সিটে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে না। চেকার উঠলেন। ট্রেন ছাড়লো। চেকার দেখেই কমলদা বলে উঠলো, 
— এই যা, বাথরুম থেকে ঘুরে শুয়ে পর। যা, যা।চেকার সবার প্রথমে কমলদাকেই ধরলো,
— দাদা টিকিট। 
কমলদা বললো,
— যার কাছে টিকিট, সে বাথরুমে গেছে। 
এবার সাধুবাবা। 
— টিকিট?
সাধুবাবা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙ্ক থেকে মুখবাঁধা একটা মাটির হাঁড়ি নামিয়ে মুখ খুলে দুটো দরবেশ বার করে চেকারের দিকে এগিয়ে দিলো বললো,
— লে বেটা, মিঠাই খা। 
কমলদা ছো মেরে দরবেশ নিয়ে বললো,
— চেকার কেআপ বাত চিচ চালা য়ে।
আর সাধুকে বললো,
— চেকার লোগ মিঠাই নেই খাতা। মিঠাই খরিদ কো লিয়ে পয়সা লেতা হ্যায়।
আবার কমলদার কাছে নাছোরবান্দা চেকার। আবার উত্তর এলো, 
— বাথরুমে।
চেকার দাদা হাত পেতে দাঁড়িয়ে রইলেন। কমলদা হটাৎ সাধুবাবাকে বললো,
— আপকা পাশ গাঁজা হ্যায়।
একে তো চেকার যাচ্ছে না, তার উপর কমলদা দরবেশের হাড়ি কোলে নিয়ে বসে আছে , এরপর কি হবে তাই ভাবছিলো সাধু, তার মধ্যে আবার গাঁজা।সাধু চিৎকার করে উঠলো, 
— কেইসে ম্যাষ্টর হ্যায় আপ, বাচ্চা লোগ কে লিয়ে ঘুমনে যাতা হ্যায়, কেয়া গাঁজা ফুকনে? 
দীপক বলে উঠলো,
— দোনোই হোগা। এ দেখিয়ে কলকে। 
সাধুর চোখ ছানাবড়া। সেলসমান ছেলেটি আঙুল দিয়ে আর একটা হাড়ি দেখিয়ে বললো,
— ও টা কি?
বলেই নামাতে গেল। সাধু লাফ দিয়ে উঠলো,
— মৎ ধরো।
ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলো। চেকার দাদার ব্যাপার বোঝা হয়ে গেছে। সে আর নড়বে না।তখনও জানি না কমলদা মোটে দুটো টিকিট কেটেছিলো। গন্ডগোলে শীলা গড়িয়ে পড়লো বাঙ্ক থেকে। কমলদা চিৎকার করে ঊঠলো,
— লাশ, লাশ।
চেকার হাওয়া। শিলা উঠে বসেছে। এবার আবহাওয়া ঠান্ডা। ছেলেটি নামবার আগে কমলদাকে ইশারায় জানিয়ে দিলো, আরেকটা হাড়িতে রাবরী আছে। আর পায় কে! কমলদা সাধুকে বললো,
— আপ বাথরুম ঘুমকে আইয়ে। শেষ অবধি যেতে বাধ্য করলো। আর ঝটপট দুটো হাঁড়ি খালি করে কাগজ ম্যাগাজিন ভরে ভালো করে বেঁধে রাখা হলো। সাধুবাবা বহরমপুর নামবে। এসে গেলো বহরমপুর।কমলদা যত্ন করে হাড়ি দুটো সাধুর হাতে তুলে দিলো।আমরা সবাই এখন ঘুমে ঢুলছি, সাড়ে তিনটে বাজে।

আগামী পর্বে : 
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বাঙলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজধানীতে পৌঁছে গেলাম। দলমাদল কামানের সামনে দাঁড়িয়ে কতকথা হুরমুর করে মনে পরে গেলো…

✓ সপ্তাহের সর্বশ্রেষ্ট কমেন্টদাতার জন্য রয়েছে বিশেষ সম্মান…

প্রকাশক : শৌভিক দে
প্রকাশনার তারিখ : ১১ ই জানুয়ারি, ২০২১
Souvik Dey

Hello. My name is Souvik Dey. I am a B.Tech. 3rd year student. I did my diploma in civil engineering and currently pursuing BTech in Computer Science. My team and I run this blog together. Don't forget to share these articles with your friends. Thank you.

1 Comments

Thank you for your valuable time.
We are fond of your comments.(but, do not spam)

  1. Anonymous12:47 PM

    পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম

    ReplyDelete
Previous Post Next Post