১
রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। চারিদিকের নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন মিশকালো অন্ধকারকে আরো ঘন করে তুলছিল! ভালো করে কান পাতলে হয়তো শোনা যাবে জানালার ওপাশ থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকাদের স্লোগান।
খাটের উপর বসে মোবাইল ঘাটছিল শৈবাল। মোবাইলের চার্জ বোধ হয় এখন অনেকটাই কমে এসেছে! ভাবতে, না ভাবতেই নোটিফিকেশন ঢুকলো লো ব্যাটারির। আর সাথেসাথেই শৈবালের মনের অন্তঃস্থল থেকে থেকে একটা বিরক্তিসূচক আওয়াজ গোত্তা খেয়ে বেরিয়ে এলো;
তারপর একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখে খাটের উপর শরীরটা এলিয়ে দিল।
ঘড়ির কাঁটার আওয়াজটা এখন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, টিক-টিক-টিক-টিক....
এভাবে ঠিক কতক্ষন কেটে গেল জানা নেই। শৈবালের চোখটাও একটু লেগে এসেছিল এরইমধ্যে।
ঠিক তখনই হুট করে পাশে রাখা মোবাইলটা বেজে উঠল।
ব্যাস! ঘুম-টুম সব উধাও।
শৈবাল :
উফ্.....এত রাতে আবার কে কল করছে!(ফোনটা ধরে, কিছুটা ঘুমের ঘোরেই উত্তর দিল শৈবাল) হ্যালো! কে?
হ্যাঁ শৈবাল, আমি মৈত্রেয়ী বলছি! ঘুমোলি নাকি?
শৈবালের বুকটা এবার ছ্যাঁত করে উঠলো। কি বলছে কি মৈত্রেয়ী! বিল্টু স্যারের তো তেমন বয়স হয়েছে বলে মনে হয় না! আর তাছাড়াও সে নিজে বিল্টু স্যারের স্টুডেন্ট। সে জানতে পারল না, আর মৈত্রেয়ী জেনে গেল! এটা কখনই সম্ভব নয়! শৈবাল এই ভেবে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে মৈত্রেয়ীকে একটা ধমক দিল;
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজা করাটা যে মৈত্রী অভ্যাসের মধ্যে পড়ে, সেটা শৈবাল বরাবরই জানত। কিন্তু, বিল্টু স্যারকে নিয়ে এমন একটা বিচ্ছিরি মজা করবে, সেটা শৈবাল আন্দাজ করতে পারেনি বলেই হয়তো প্রথমে বুকটা কেঁপে উঠেছিল তার।
আরে শৈবাল বোঝার চেষ্টা কর! আমি ইয়ার্কি মারছি না। আমি ভেবেছিলাম, তুই অন্তত জানবি। সকালে মা বাজার করে ফেরার সময় খবরটা নিয়ে আসে। আমিও তখন বিশ্বাস করিনি। কিন্তু, দুপুরের দিকে তোদের সাথে পড়ত সঙ্গীতা বলে মেয়েটা আমাকে ফোন করে পুরো ঘটনাটা বলে। ও নাকি আজ বিল্টু স্যারের বাড়ির সামনে দিয়ে আসছিল, সে সময় ও স্যারের বডি দেখতে পায় বাড়ির সামনে শুইয়ে রাখা অবস্থায়। ওর কথা শুনেই আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হই।
মৈত্রেয়ীর ডাক কানে যেতেই শৈবাল একটু অন্যমনস্ক ভাবি উত্তর দিল,
ফোনটা কেটে গেছে অনেকক্ষন হলো। এইমাত্র শেষবারের মত আওয়াজ করে সুইচড অফ্ হয়ে গেল। চার্জটা একেবারেই শূন্য হয়ে গেছে। এমনিতেই চার্জ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে শৈবালের ফোনটা ডেড হয়ে যায়। দোকানে না নেওয়া অবধি চার্জ দিয়েও অন করা যায় না। কিন্ত, সকাল না হওয়া পর্যন্ত এভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকলে যে ফোনটার কি হবে! আদৌ কি ফোনটা আর অন করা যাবে!
সে চিন্তা অবশ্য শৈবালের মাথায় ঘুরছে বলে মনে হয় না। তার শুধু মনে হতে লাগলো, কে যেন বাতাস থেকে অক্সিজেন শুষে নিচ্ছে ধীরে ধীরে, দম আটকে আসছিল শৈবালের, সে মুহূর্তের মধ্যে লাফ দিয়ে বন্ধ জানালাটার কাছে গেল, তারপর একটানে পাল্লা দুটো হাঁ করে খুলে দিল।
বাইরেটা এখনও নিস্তব্ধ, যে বাতাসটুকুর আশায় শৈবাল জানলা খুলেছিল, দূর-দুরান্তের তার দেখা মেলে না। উপরন্তু তার মনে হতে লাগলো, যেটুকু শ্বাস-বায়ু তার এই ছোট্ট ঘরে ছিল, সেটুকুও যেন এবার এক বিশাল উন্মুক্ত ঘরের চার কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে!
বেলা তখন প্রায় দশটা। বিল্টু স্যারদের বাড়ির গেটটা আজও একইভাবে আটকানো আছে। বাইরে থেকে দেখলে মনেই হয় না গতকাল কিছু একটা অঘটন ঘটে গেছে এই বাড়িতে। প্রায় ৬০ বছর আগে তৈরি এই বাড়িটার রং অনেকটাই চটে গেছে আজ। দোতলার উপরে নতুনভাবে একটা ঘর তোলা হয়েছে, কিন্তু সেটার বাইরের দেওয়ালে এখনও প্লাস্টার হয়নি। মেইন রাস্তার সামনের দিকে দুটো গেটের একটা প্রায় জীর্ণ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, ওই গেটটা দিয়েই এককালে শৈবালরা সাইকেল নিয়ে ঢুকত সামনের ছোট্ট উঠোনে। সেখানেই পাঁচিলের গায়ে সাইকেলগুলো হেলান দিয়ে রাখতো ওরা।
মৈত্রেয়ী বা অন্যান্যদের কাউকে না দেখতে পেয়ে শৈবাল একবার হাত ঘড়িটার দিকে চোখ রাখলো। বড্ড তাড়াতাড়িই এসে পড়েছে সে। মৈত্রেয়ী তো বলেছিল সকাল এগারোটা। ওদের আসা অবধি অপেক্ষা করা উচিত কি!
কি করবে এই ভাবতে ভাবতে, এমন সময় পেছন থেকে খুব পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো শৈবালের কানে....
শৈবালের বুকটা ধড়াস করে উঠল একবার। আরে, এ ডাক তো..... শৈবাল কণ্ঠস্বর অনুসরণ করে পিছন ফিরতেই, তার চক্ষু চড়কগাছ!
খানিকটা তোতলিয়ে সে বলল,
শৈবালের চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই চেনা পরিচিত রোগা লিকলিকে মানুষটা। চোখে সেই চশমাটা। বোঝা যাচ্ছে, অনেকক্ষন রোদে থেকে কালো হয়ে গেছে কাঁচটা। ঠোঁটের কোণে ওই অফুরন্ত হাসি, আর ওই একই চেনা পরিচিত ডাক। বিল্টু স্যার! হ্যাঁ স্যারই তো! শৈবালের চোখ মুখ দেখে বিল্টু স্যার হাসিটা চওড়া করে বললো,
স্যারের পিছু পিছু সেই ছোট্ট টিউশনের ঘরটাতে গিয়ে বসল শৈবাল। মাধ্যমিক পাশ করে বেরোনোর পর যখনই সে স্যারের বাড়িতে এসেছে, তখনই স্যার তাকে দোতলায় নিয়ে যেত। কিন্তু, আজ স্যার নিচের তলার ওই ছোট্ট ঘরটায় নিয়ে গেলেন সৌরভ থুড়ি, শৈবালকে। এই ঘরেই কেটেছে শিক্ষক-ছাত্রের স্মৃতিময় দুটি বছর।
শৈবাল শুনতে পেল উপরতলা থেকে অজয় স্যারের সেই চিরপরিচিত অদ্ভুত মায়াবী গলার আওয়াজটা। অজয় স্যার, বিল্টু স্যারের দাদা, শৈবাল ওনার কাছে জীবনবিজ্ঞান পড়তে আসত। প্রথম দিন পড়তে এসে অজয় স্যারের গলাটা বড়ই অদ্ভুত লেগেছিল তার, যেমনি চড়া সুর, তেমনি জোরালো কণ্ঠ। পরবর্তী কালে শৈবাল বুঝেছিল, এই গলার কি মাহাত্ম! সে যে কি জ্ঞান অজয় স্যারের....তেমনি ছিল বোঝানোর ভঙ্গিমা। দুই ভাই মিলে যেভাবে শৈবালদের পড়াতো, তাতে করে বছরের শেষে লেটার মার্কস না নিয়ে কেউ বাড়ি ফিরত না। ত্রুটির মধ্যে যা ছিল, সেটা বিল্টু স্যারের। রেগে গেলে উনি বড্ড তোতলাতেন। সে সময় তার দুবেলা যাতায়াত ছিল এবাড়িতে। এখন তো আর আসাই হয় না। কিন্তু, তাও যেন কোথাও একটা মায়ার টান জড়িয়ে আছে এ বাড়িটার সাথে। আগে পড়তে আসলে এই ঘরের সামনের বারান্দাতে বসে থাকতে দেখা যেত বিল্টু স্যারের বাবাকে। দেখা হলেই সব সময় শৈবালদের সাথে কথা বলতেন তিনি। সে যে কতরকমের কথা! ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য....সব বিষয়েই যে তাঁর দারুন জ্ঞান ছিল, সেটা বুঝতে বাকি নেই শৈবালের। অথচ, তিনি ছিলেন সামান্য এক ব্রাহ্মণ। মাঝে মাঝে অজয় স্যারকে বিল্টু স্যারকে বলতেন,
এভাবেই শৈবালদের কেটে যেত পড়ার দিনগুলো। তবে স্যাররা কখনই ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকের কাছে নালিশ করতেন না কোনো বিষয় নিয়ে। শৈবালদের ব্যাচে এমন অনেক ছাত্রই ছিল, যারা পুরো বছর মাত্র ৫০০ টাকা বেতন দিয়েছে স্যারদের। কিন্তু, জ্ঞানতপক্ষে কখনই শৈবালের মনে হয়নি, ওই ছাত্ররা অবহেলিত হয়েছে স্যারদের কাছে। বরং, ওরাই বেশি নম্বর নিয়ে পাশ করত পরীক্ষাগুলোতে। সেই সময় চারিদিকে যখন টিউশনি নিয়ে রীতিমত ব্যবসা চলছিল, সেখানে শৈবলরা এবাড়িতেই খুঁজে পেয়েছিল তাদের প্রকৃত গুরুকে। শৈবালের কাছে এই বাড়ি ছিল স্বর্গের মতই পবিত্র এবং স্নেহময়।
স্বপ্ন রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতে আবার স্যারের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল,
এখন ভালই আছি রে। কিছুদিন অবশ্য একটু শরীর খারাপ ছিল...
তোরা তো আর আসিস না তোদের স্যারকে দেখতে....
শৈবাল স্যারের কথা বেশ লজ্জা পেল, সে মাথা নিচু করে বসে রইল। শৈবালকে ওভাবে চুপ করে থাকতে দেখে বিল্টু স্যার নিজেই বলল,
স্যার যতই বলুক, শৈবালের মনে তখনও খচখচ করছিল বিষয়টা। নিজের শিক্ষাগুরুর জন্য বছরে এক ঘণ্টা সময় বার করতে পারে না তারা! কী নির্মম এই ছাত্রসমাজ....
যে মানুষটা সারা বছর নিজের ছেলের থেকেও বেশি তার ছাত্রদের জন্য ভেবে যায়, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারাটা বছর শুধু শিক্ষা বিলিয়ে বেড়ায়, বছর শেষে তাদের আমরা কিই বা দিই! শুধু কটা টাকা দিয়েই আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্য জগতে ঢুকে পড়ি...নতুন এক জীবনের আশায়। আর অতীতের এক সংকীর্ণ গলিতে পড়ে থাকেন আমাদের এই স্যার-ম্যাডামরা...
কেউ কেউ চাইলেও সেই গলি পথে ঢুকতে পারে না, সে পথে যে পুরনো গন্ধ... যদিও বা কোনক্রমে গলিতে ঢুকেছ, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে...অনেক দেরি....
এসব ভেবে শৈবাল আর কথা বলতে পারে না। ওদিকে শৈবালকে কোনো কথা বলতে না দেখে বিল্টু স্যার নিজেই আবার বললেন,
স্যার কথাটা বলতেই শৈবালের মনে পড়ল, স্যার রেগে গেলে যে কি ভীষণ তোতলাতেন, তা বলার মত নয়। এবার সে মুচকি হেসে স্যারকে বলল,
স্যার, আপনি তো আমাদের ভালোর জন্যই বলতেন, তাছাড়া অমন একটু শাসন না করলে আমার তো আজও জ্যামিতির ভয় কাটিয়ে ওঠা হতো না!
শৈবাল বেশ অবাকই হলো, স্যার এই ব্যাপারটাও লক্ষ্য করেছেন! আসলে শৈবাল কিছুতেই মানতে পারত না যে, অন্য কোনো ছাত্র স্যারের কাছে তার থেকে বেশি মেধাবী প্রমাণিত হবে... শৈবাল নিজের ওই ছেলেমানুষীর কথা ভেবে মনে মনে হেসে উঠলো, বলল,
তুই যদি আমায় খুশি করার জন্য অঙ্ক না করতিস, তাহলে আমি বেশি খুশি হতাম। তবে আমি তোর ইচ্ছাশক্তিকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করি। তুই যে ভাবে আমার কাছে পড়তে এসেছিলিস, আর পরে যা হয়েছিস, তাতে আমি সত্যিই গর্বিত...
বিল্টু স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে আধঘন্টা কেটে গেল বুঝতেই পারলো না শৈবাল...
হাতঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই শৈবাল টুল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
এই বলে সে স্যারকে টুক করে একটা প্রণাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠলো। বিল্টু স্যার তখনও পেছন থেকে বলছিল,
শৈবালের মনটা বেশ আনন্দে ভরপুর আজ। কতদিন বাদে সে এমন বুকভরা আনন্দ নিয়ে দিন শুরু করেছে। শুধু একটা ব্যাথা রয়ে গেল মনে, তার প্রিয় স্যারকে নিয়ে এমন ভাবে কেউ মজা করবে, সেটা সে মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে কিছুদূর এগোতেই শৈবাল দেখতে পেল মোড়ের মুখটা থেকে বেড়িয়ে আসছে মৈত্রেয়ী। তাকে দেখে শৈবালের প্রচন্ড রাগ হলো। মনে হচ্ছিল, ছুটে গিয়ে একটা চড় মেরে আসে ওর গালে।
মৈত্রেয়ীর সাথে ওদেরই ব্যাচের কয়েকজন বন্ধুবান্ধব ছিল। শৈবাল মৈত্রেয়ীকে দেখেও না দেখার ভান করে হাঁটতে লাগল। সে ভেবেছিল, মৈত্রেয়ী তাকে ডাকলে ভালো মত কথা শুনিয়ে দেবে সবার সামনে।
কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় মৈত্রেয়ীও তাকে পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে।
শৈবাল ওদের কথা গ্রাহ্য না করেই চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু, তার হঠাৎ খেয়াল হলো, অজয় স্যারের সাথে তো দেখা হলো না! খেয়াল হতে না হতেই সে পিছন ঘুরে দেখল, মৈত্রেয়ীরা বিল্টু স্যারদের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। শৈবাল তখন হনহন করে ওদের দিকে ছুটে গেল। কিন্তু, কাছাকাছি যেতে না যেতেই শৈবাল যা দেখল, তাতে করে ওর সমস্ত কিছু গুলিয়ে যাচ্ছিল। এবার ওর মাথার ভিতরটা ঝিম ঝিম করে উঠল। সে দেখল, বিল্টু স্যারের স্ত্রী সাদা থানকাপড় পড়ে মৈত্রেয়ীদের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না জড়ানো গলায় কিছু একটা বলছে। পাশেই উত্তরীয় গায়ে দাঁড়িয়ে আছে বিল্টু স্যারের ছেলে।
শৈবাল কী করবে কিছু বুঝতে না পেরে এগিয়ে গেল ওদের দিকে। ওরা বলছে,
শৈবাল সবকিছুই শুনতে পাচ্ছিল রাস্তার এপারে দাঁড়িয়ে। কি হচ্ছে এসব! কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
সে ভাবতে লাগল এতক্ষণ সে কার সাথে ঘরে কথা বলছিল! ধীরে ধীরে সবটা পরিষ্কার হচ্ছিল ওর কাছে। দুমাস চিকিৎসায় ছিলেন স্যার, আর সেটা শৈবাল জানত না! এই কথাটাই ওর মাথা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল।এবার সত্যিই কান্না পেয়ে গেল শৈবালের।
ঠিক তখনই কে একজন ওর কাঁধে হাত রাখল। মাথা তুলতেই সে দেখল পাশে বিল্টু স্যার দাঁড়িয়ে।
শৈবালের মনে হলো, ওর চোখের সামনে যেন কোনো এক নাটকের দৃশ্য চলছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে উত্তরীয় গায়ে দেওয়া স্যারের ছেলে, আর পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং বিল্টু স্যার।
শৈবালের মাথা কাজ করছে না। সে চেঁচিয়ে মৈত্রেয়ীকে ডাকল,
কিন্তু, কোথায়! কেউই তো তার কথা শুনছে না! তার গলার আওয়াজ কি তাহলে রাস্তার ওপার অবধি যাচ্ছে না! সে ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠতে লাগল, অবশেষে সে বিল্টু স্যারের দিকে ঘুরে স্যারকে জিজ্ঞেস করল,
স্যারের হাতের সেই চাপড় খাওয়া মাত্রই শৈবাল হকচকিয়ে উঠল। সে চোখ মেলে দেখল, তার মাথার উপর ঘরের পাখাটা ঘুরছে আস্তে আস্তে, দিনের আলো খোলা জানালা দিয়ে ওর মুখে এসে পড়েছে।
রাতে জানলাতেই হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল শৈবাল। কখন কারেন্ট চলে এসেছে সে টেরই পাইনি। শৈবাল বুঝতে পারল, সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল।
বিছানা ছেড়ে উঠে আস্তে আস্তে সে নিজের ডেড মোবাইলটা চার্জে বসালো। যদিও সে জানতো, দোকানে না নেওয়া অবধি এটা অন হওয়ার নয়। দেওয়াল ঘড়িতে চোখ পড়তেই দেখল, বেলা এগারোটা বেজে গেছে।
এই বলে সে মুখ হাত ধুতে গেল বেসিনে। বেসিনের আয়নায় নিজের মুখটা দেখে সে স্পষ্ট বুঝতে পারল, রাতে নিজের অজান্তেই কেঁদেছে সে। মুখ-হাত ধুয়ে ঘরে ফিরতেই শৈবালের চোখ গেল তার মোবাইলের আলোর দিকে।
আরে, কি আশ্চর্য! মোবাইলটা অন হয়ে আলো জ্বলছে। এমন তো কোনোবার হয় না! সে এক পা লাফিয়ে গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল, অনেকগুলো মিসড কল আর মেসেজ। সবগুলোই মৈত্রেয়ীর। শৈবাল চট করে কলব্যাক করল,
ফোন রেখে কোনোরকমে একটা জামা গায়ে চাপিয়ে বাজারের মধ্যে দিয়ে সাইকেলটাকে কাটিয়ে কুটিয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে সে হাজির হলো শিব মন্দিরের সামনের রাস্তাটায়। রাস্তার ওপাশ থেকে মৈত্রেয়ী হাত তুলে ইশারা করছে তার উদ্দেশ্যে। শৈবাল এগিয়ে গেল তার দিকে। সে যত এগোচ্ছিল, ততই কেমন যেন মনে হচ্ছিল, একটু আগেই তো সে এখানে ছিল! মৈত্রীয়ীর সামনে গিয়ে সাইকেল থেকে নেমে সে আরও অবাক হলো। ঠিক একই চুড়িদার মৈত্রেয়ীর গায়ে, যেমনটা সে স্বপ্ন দেখেছে।
শৈবাল পাশে তাকিয়ে দেখল অভিষেক দাঁড়িয়ে আছে। ওর পরনেও ঠিক একই ড্রেস! স্বপ্নের সাথে বাস্তব যেন হুবহু মিলে যাচ্ছে শৈবালের। কোনটা বাস্তব আর কোনটা স্বপ্ন সেটাই তার কাছে এখন অস্পষ্ট লাগছে।
বিল্টু স্যারের স্ত্রী-ছেলের সাথে দেখা করে শৈবালরা অজয় স্যারের কাছেও গেল একবার। সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে ওরা এবার বেরিয়ে এল বাড়িটা থেকে। স্যারের মা খুব কাঁদছিলেন। পরপর এক মেয়ে, এক ছেলেকে হারালেন এ বয়সে এসে। স্যারের বাবাকে এবারও দরজার পাশের চেয়ারটাতেই বসে থাকতে দেখলো শৈবাল। আজ প্রথমবার কোনো কথা বললেন না তিনি শৈবালের সাথে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে অরিজিৎ বলল,
ভালো
ReplyDelete❤️❤️❤️
Delete