পলাশী ও আমি
কাবেরী তালুকদার
আগে যা ঘটেছে : বিনোদনের তিন দিন :
সোমবার
কাবেরী তালুকদারের “পলাশী ও আমি”
মঙ্গলবার
দেবদাস কুুুণ্ডুর “মুখোমুখি”
বুধবার
শৌভিক দে-র ছোট গল্প ও কমিক সিরিজ
- অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তর
- আপডেট : Happy New Year 2021
- শৌভিক দে
লেখিকার বিষয়ে কিছু কথা :
(জানতে ব্লগ কমিউনিটিতে চলে যান)
এবার এলো ১৭৩৮/৩৯সাল।
এই সময়টা অনেকটা আমাদের ২০২০সালের মতোই অভিসপ্ত। হটাৎ একদিন আগুন জলে উঠলো গোটা বাঙলাদেশে বর্গীদের হানাতে।গ্রামের পর গ্রাম তারা আগুন জ্বালিয়ে দিলো। ফসল লুটপাট করতে লাগলো। মানুষ মারতে লাগলো।আর নারী ধর্ষন হতে লাগলো।নিস্তার নেই কারো।প্রায় একটা দশক ধরে চলেছিলো এই তান্ডব। এই সময় তামাম বাঙলার লোক এসে জরো হতে লাগলো এই সুতানুটি, গোবিন্দ পুর আর কোলকাতায়।দেশের লোকেদের নবাবের উপর কোন আস্থা বা ভরসা ছিলো না।তারা দুটি জিনিস ভেবে নিয়েছিলো।নদী পার হয়ে এপারে বর্গীরা আসবেনা।কা্যন ইঙরেজদের কামান আছে। কিছু না হলেও একটু তো ভয় পাবেই। আলীবর্দী ঐ এক দশক ধরে প্রচূর ছোটাছুটি করলেন।শেষে উপায় না দেখে বর্গীদের মাথা ভাস্কর পন্ডিতের সঙ্গে সন্ধী করলেন।ভাস্কর পন্ডিত সন্ধীর সমজোতা হিসাবে উড়িষ্যার রাজস্বকর ধার্য্য করলেন।অগত্যা তাতেই রাজি হতে হলো আলীবর্দী কে।এই ভাবেই সুখে দুঃখে আলীবর্দী র জীবন কেটে গেলো।এরপর মসনদে বসলো আলীবর্দী র পেয়ারের লাডলা নাতি সিরাজদ্দৌলা ।
একটা কথা।যে কোন মানুষ জাতি এমনি এমনি বড় হয় না। কিছু গুন থাকা দরকার।ইঙরেজ দের ছিলো।অত্যন্ত সুসভ্য জাতি। আমাদের দেশের মানুষ দের শিক্ষিত করার আশি ভাগ কিত্তৃত্ব ইঙরেজদের।এত স্কুল কলেজ স্থাপন, নিয়মানুবর্তিতা, এবং সবচেয়ে বড় গুন ধনী দরীদ্র নির্বিশেষে মানুষ কে সম্মান করা।এত অসান্তির মধ্যেও প্রতিদিন ভোরে রুল ব্রীটানিয়া বাজিয়ে সৈন্যরা মার্চ করতো।
সিরাজকে মসনদে বসিয়ে দিলাম।এখন সিরাজ লাফাঙ্গা হয়ে কিছু দিন উরুক। আমার বন্ধুরা রাগ করছে।ওরা বলছে আমাদের গল্পটা আগে শেষ কর। আবার ফির যাচ্ছি সেই ইউনিভার্সিটি তে।আমাদের মুর্শিদাবাদ বেরাতে যাওয়া।সত্যি জীবনে কোনদিন ও ভুলবো না এই বেরানোর কথা।
নবাব প্যালেস, মানে হাজার দুয়ারী ,কাটারা মসজিদ, আলীবর্দী র কবর, মোটামুটি গঙার এপারের সব ই দেখা হলো।কাল সকাল থেকে ভাগীরথীর ওপার দেখে সোজা স্টেসন হয়ে আবার গাড়ি চেপে বাড়ি। কিন্তু রাতে থাকার জায়গা চাই।ওখানে সোমনাথের মন্দীর বলে বলে একটা মন্দীর ছিলো। বেরিয়ে আসছি, একটি ছিপছিপে ফরসা ,উনীশ কুড়ি বছরের ছেলে এগিয়ে এসে বললো গাইড নেবেন?খুব মিষ্টি মুখ ছেলেটির।কমলদা খেঁকিয়ে উঠলো। তুমকো গাইড লাগেগা?হাম সব লোক গাইড হ্যায়।ছেলেটি হেঁসে উঠলো।বললো ,ঠিক আছে গাইড দাদা দিদিরা ,আমাকে শুধু বলুন সিরাজ দৌল্লার বাবার নাম কি?,কমলদা হারবার পাত্র নয় । আমাদের ঠেলছে । কিন্তু আমরা তো জানি না।আমি এক মনে ছেলেটিকে দেখছিলাম।মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলো ”বিলাল” , চমকে উঠলো ছেলেটি। আমি কিন্তু কিছু নাভেবেই বলে ফেলেছি নামটা।এগিয়ে এলো আমার কাছে।বললো, আপনি আমাকে চেনেন?,, কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না। আমি বললাম এখন থেকে দশ বারো বছর আগে আমি দিদি জামাইবাবুর সঙ্গে একবার এসে ছিলাম।তখন একটি বাচ্চা ছেলে তার নাম ও বিলাল,সে গাইড হতে চেয়ে এই এক ই প্রশ্ন করেছিলো। ছেলেটি অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,সেই ছেলেটা আমিই ছিলাম দিদি। আমার নাম বিলাল।নবাবের কবরের পিছনেই আমার বাড়ি।চলুন দিদি আপনারা আমাদের বাড়িতে চলুন।স্যারেরা সবাই না না বলে উঠলেন।আমরা কাল ই ফিরে যাবো।বিলাল ও ছারবে না।বহুদিন বাদে জান পহেজান আপাকে পেয়েছে,বাড়ি নিয়ে যাবেই।খাতীরদারী না করলে আল্লা গুস্সা করবেন।অগত্যা ভাস্কর স্যার বললেন রিতে একটা থাকার জায়গা করতে পারো।বিলাল সঙে সঙ্গে রাজি।গেলাম ওদের বাড়ি।বিলাল বি কমফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র। বহরমপুরে পড়ে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে গাইডের কাজ করে। আব্বার যেটুকু সাহায্য হয়।ওর আব্বা লতিফ খান হাসলেন।তবে খুব খুশি।একটা দশ বছরের ছোট বোন আছে ,বোবা।খুব সুন্দরী।ওর মা খুব যত্ন করে আমাদের এতজনকে পুরি আরহালুয়া আলুর দম খাওয়ালেন।খানদানী লোক ওরা।আমাদের জন্যে দুটো বড়ো ঘর ছেরেদিলেন।মেঝেতে পুরু করে বিছানা পাতা হলো।শুতে পারলে বাঁচি।রাতে কেউ কিছু খেয়েছে কিনা জানি না। আমি খাইনি। হঠাৎ ঘুম ভাঙলো ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দে।ডান দিকে হাত দিয়ে দেখলাম শ্যামলী।আবছা আলোয় ঢেলা মারলাম।ও দেখলাম জেগে আছে।কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,কানে আঙুল দি য়ে ঘুমিয়ে পর, মিনতি দি নাক ডাকছে। আমাদের সঙ্গে একটা বি এ ক্লাসের মেয়ে এসেছিলো।পলাশের বন্ধু।একটু উঁচু হয়ে দেখলাম ,দুটো খাটিয়ায় ভাস্কর স্যার আর কমলদা,অন্যটায় মিনতি দি একাই হাত পা ছরিয়ে শুয়েছেন।ঘর জোরা বিছানার একধারে মেয়েরা, আর এক পিশে কিছু ছেলে শুয়েছে।বাদ বাকিরা পাশের ঘরে। আমি শ্যামলী কাজল শীলা পরপর শুয়ে আছি।হটাৎ শুনি ফিসফিস করে কারা কথা বলছে। আবার শ্যামলীকে ঠেললাম।বা দিকথেকে কাজল খুব আস্তে বললো পলাশ আর মৌ।ঘুমিয়ে পর।শ্যামলী ও কানে মুখ লাগিয়ে বললো এমন সুযোগ কেউ ছাড়ে। কিন্তু আমার ঘুম যে মাথায় উঠেছে।
(ক্রমশ…)
আগামী পর্বে :
…আর বিচ্ছু কমলদা, নিঃসন্তান মিনতিদির সন্তান হয়ে ছেলের মতো আগলে বসেছিলো কাজ না মেটা পর্যন্ত।সে কি বুক ফাটা হাহাকার।আজো কানে বাজে।…
প্রকাশক : শৌভিক দে
প্রকাশনার তারিখ : ৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১