মুখোমুখি ধারাবাহিকের চতুর্থ পর্ব পড়ুন অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরে, লিখছেন লেখক দেবদাস কুুুণ্ডু। প্রতি মঙ্গলবার থাকছে শুধুমাত্র আপনাদের জন্য…
“গল্প : মুখোমুখি”
আগে যা ঘটেছে…
বিনোদনের তিন দিন :
সোমবার
কাবেরী তালুকদারের “পলাশী ও আমি”
মঙ্গলবার
দেবদাস কুুুণ্ডুর “মুখোমুখি”
বুধবার
শৌভিক দে-র ছোট গল্প ও কমিক সিরিজ
চতুর্থ পর্ব
সংগীতা একটু মৃদু হাসে, সিগারেট ধরায়। তারপর মুহূর্তে গলার স্বর পাল্টে বলে, ‘আমি মনে করি মানুষ মূলত বাঁচে যৌনতার জন্য। বিশেষ করে পুরুষ মানুষ। আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবে? তোমার জীবনে কী কোন যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি! জানি তুমি বিয়ে করোনি।’
‘কেন একথা বলছিস?’
‘পঁচিশটা গল্প। এতটুকু যৌনতা নেই কোথাও। হয় তোমার যৌন অভিজ্ঞতা হয়নি। না হলে বিষয়টা তুমি এড়িয়ে গেছো। এটা কিন্তু জীবন থেকে পালানোর মতো।’
‘তোর তো বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি যদি জানতে চাই তোর এই অভিজ্ঞতা হয়েছে কি না?’
‘আমার কথা ছাড়ো। আমি তো লিখছি না। তোমার কথা বলো।’
অনির্বাণ আজ এক কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াল। সে একজন শিক্ষক, তারই ছাত্রী তাকে প্রশ্নটা করছে। কিন্তু কফিশপে তারা এখন লেখক-পাঠক। লেখক তার উত্তর দেবে কি না সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু সত্যটা কি এড়িয়ে যেতে পারে?
তখন তার বয়স উনিশ বা কুড়ি হবে। কো-এড কলেজে পড়ছে। বাংলাটা ভালো লিখতো ম্যাডাম তার খাতা দেখে ক্লাসে নোটস দিত। সেই সূত্রে অনেক মেয়ের সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। স্বপ্নার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা ছিল বেশি। একবার টানা সাতদিন কলেজ গেল না, অসুস্থ। সে ঠাকুমার কাছে থাকত। তার বাবা-মা-ভাই-বোনেরা থাকত ফ্ল্যাট বাড়িতে। বছরে একবার করে তার জ্বর হত। জ্বর হলে সে ফ্ল্যাট বাড়িতে চলে যেত। সেবার যায়নি। ঠাকুমা গেছে রাধা গোবিন্দর মন্দিরে, তার সুস্থতার জন্য পুজো দিতে। সে ঘরে একা। দুপুর বেলা। হঠাৎ ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে সে। স্বপ্না তার সামনে দাঁড়িয়ে। স্বপ্না তার ঠিকানা জানত। কিন্তু এভাবে চলে আসবে, ভাবেত পারেনি। অর্নিবাণ তপ্ত গলায় সে বলেছিল, ‘তুই!’
‘থাকতে পারলাম না তোকে না দেখে, চলে এলাম।’
সেদিন কথাটা শুনে তার খুব ভাল লেগেছিল। একটা মেয়ে অন্তত তার অনুপস্থিতি সহ্য করতে না পেরে চলে এসেছে। একেই কি ভালবাসা বলে! কিংবা প্রেম! প্রেম আর ভালবাসা কি এক, না আলাদা? যাই হোক সে স্বপ্নাকে নিয়ে কফি হাউসে গেছে, সিনেমায় গেছে, আউটট্রামঘাট গেছে, দক্ষিণেশ্বরে নৌকাবিহার করেছে। এগুলো প্রেমের চিহ্ন কিনা তা নিয়ে সে কোনদিন ভাবেনি।
‘অসুখ বাধিয়েছিস নিশ্চয়?’
‘জ্বর।’
‘দেখি। স্বপ্না তার হাত রাখল আমার বুকে। জ্বর দেখে মানুষ কপালে হাত দিয়ে।
স্বপ্না কেন বুকে হাত দিল! ওর হাতটাও আগুন আগুন। বলেছিলাম, ‘স্বপ্না তোরও কি জ্বর হয়েছে?’
‘ধ্যাৎ। আমার জ্বর হতে যাবে কেন? জ্বর হলে আসতে পারতাম?’
‘দেখি তোর বুকে হাত রেখে?’
‘জ্বর কেউ বুকে হাত দিয়ে দেখে নাকি?’
‘এই যে তুই আমার বুকে হাত দিলি? আমি কেন তোর বুকে হাত দিতে পারবো না? মেয়েরা ছেলেদের বুকে হাত দিলে কোন দোষ নেই, ছেলেরা মেয়েদের বুকে...’
স্বপ্না বলেছিল, ‘অত কথা বলতে হবে না। নে দেখ।’
দু’টো বুকেই তখন আগুন জ্বলছিল। দাউ দাউ করে। সেই আগুন পোষক পুড়িয়ে নিরাভরণ করল দু’টো শরীরকে। সেই বহ্নি উৎসব চলল দশ কি বারো মিনিট। তারপর শ্মশানের মতো সব শান্ত। বাড়ির উঠোনে তিনটে কাক তখন ডাকছে। যেন তারা এই বহ্নি উৎসবকে স্বাগত জানাচ্ছে।
স্বপ্না শাড়ি, ব্লাউজ, চুল সব আগের স্থানে ফিরিয়ে নিয়ে ঠোঁটে পলাশ রং লাগাতে লাগাতে বলেছিল, ‘আমার কিছু টাকার দরকার। দে তো।’
‘তুই কি টাকার জন্য এসেছিস?’
স্বপ্না কোন উত্তর দেয়নি সেদিন। প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিল সে। স্বপ্না টাকার জন্য শরীর দিল? তাহলে, প্রেম নয়, ভালবাসা নয়। খুব কষ্ট হয়েছিল তার। টাকা সে দিয়েছিল। তারপর স্বপ্না আর আসেনি। অনেক অনুরোধ উপরোধ করেছিল সে। স্বপ্না কর্ণপাত করেনি। সেই একদিনের আগুন তাকে পুড়িয়েছে প্রতিদিন।
‘কি এতো ভাবছো বলো তো?’ নতুন কফিতে চুমুক দিয়ে সংগীতা বলে, ‘কোন সত্য কি লুকানোর চেষ্টা করছো? তুমি নিশ্চয় জানো অনেক লেখকের প্রথম লেখায় তাদের জীবনের কথা অকপটে এসেছে। যেমন সুনীলের ‘আত্মপ্রকাশ।’
ক্রমশ…
… সবচেয়ে সুন্দর কমেন্টদাতার জন্য রয়েছে সপ্তাহের শেষে বিশেষ সম্মান …
গল্পটি এখনই সম্পূর্ন পড়তে হলে চলে যান নিচের বক্সে দেওয়া ঠিকানায় :
প্রকাশক : শৌভিক দে
প্রকাশনার তারিখ : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১