মুখোমুখি ধারাবাহিকের তৃতীয় পর্ব পড়ুন অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরে, লিখছেন লেখক দেবদাস কুুুণ্ডু। প্রতি মঙ্গলবার থাকছে শুধুমাত্র আপনাদের জন্য…
“গল্প : মুখোমুখি”
আগে যা ঘটেছে…
বিনোদনের তিন দিন :
সোমবার
কাবেরী তালুকদারের “পলাশী ও আমি”
মঙ্গলবার
দেবদাস কুুুণ্ডুর “মুখোমুখি”
বুধবার
শৌভিক দে-র ছোট গল্প ও কমিক সিরিজ
তৃতীয় পর্ব
অনির্বাণকে অভিভাবকের সুরে থামিয়ে দিয়ে সংগীতা বলে, ‘তোমার লেখায় মানবিক সম্পর্ক আছে। মনের জটিলতা আছে। বিপন্নতা, অসহয়তা সবই আছে। কিন্তু আমি মনে করি মানুষের সব সম্পর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে যৌনতা কাজ করে।’
অনির্বাণ মূক মানুষের মতো সংগীতাকে দেখে। সুন্দর ফ্রেমের চশমার আড়ালে ওর চোখ দু’টো বড্ড মর্মভেদী। অনির্বাণ বলে, ‘আমি মনে করি সব সম্পর্ক টিকে থাকে প্রেমে।’
সংগীতা পাকা নেশারুর মতো সিগারেট টানছে। ‘হ্যাঁ প্রেম আছে। কিন্তু তোমার গল্পে শরীর ছাড়া প্রেম। হয় নাকি? তুমি একটা গাড়ি কিনলে, তাতে তেল ভরলে না। গাড়ি চলবে? শরীর ছাড়া প্রেম, অন্ধকার ছাড়া আলো, তুমি কি করে ব্যাখ্যা করবে?’
অনির্বাণ পাল্টা যুক্তি দেয়, ‘আমি মনে করি শরীর ছাড়া প্রেম হয়।’
সংগীতা সুতীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে, ‘এই সভ্যতা দাঁড়িয়ে আছে যৌনতার ওপর। এই যে সারাদিন মানুষ ছুটছে, কাজ করছে, লড়াই করছে, তার প্রেরণা বলো, উৎস বলো সবই যৌনতা।’
অনির্বাণ বিভ্রান্ত। তার চিন্তা ভাবনায় ভাঙন ধরছে। তবু সে গলায় লেখকের আত্মপ্রত্যয় রেখে বলে, ‘তুই কি দাম্পত্য যৌনতার কথা বলছিস? সে তো আছেই। তাকে লেখায় আনতে যাবো কেন?’
‘কিছু খাবারের অর্ডার দাও। বড্ড খিদে পেয়েছে।’
খাবারের অর্ডার দিয়ে অনির্বাণ বলে, ‘বল এবার।’
‘তুমি জানো রবীন্দ্রনাথের বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কতগুলি সন্তান?’
‘১৫ টা, তার জন্য আমরা রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছি।’
‘তা ঠিক। উনি মহর্ষি। বার বার ছুটে গেছেন হিমালয়ের কাছে। আবার তিনি স্ত্রীর কাছেও ছুটে এসেছেন। যৌনতা ছাড়া তার হিমালয় দর্শন পূর্ণ হতো না। হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য যৌনতার কাছে নতজানু হলো।’ সংগীতা থামল, চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, ‘তুমি নিজে বলেছো, তোমরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। তোমার বাবা পূর্ববঙ্গ থেকে ১৯৪১-এ এসেছেন। অনেক লড়াই করেছেন। ওনার এই লড়াই-এর পিছনেও কাজ করেছে যৌনতা। যদি উনি একক জীবন যাপন করতেন, তখন এই তীব্র লড়াইটা করতেন না। যৌনতাই সব সম্পর্ক ধরে রাখে। যেখানে আজকের অনেক দাম্পত্য সম্পর্ক পাতলা কাঁচের মতো ভেঙে যাচ্ছে।’
অনির্বাণের অস্বস্তি হয়। বলে, ‘সব সম্পর্ক ভেঙে যাবার পিছনে কি যৌনতা দায়ী?’
সংগীতা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে। চুলের লাক সরিয়ে বলে, ‘বেশির ভাগ। এই যে এত ধর্ষণ হচ্ছে, বলা হচ্ছে বিকৃত মানসিকতা। না, এতটুকু না। একটা সুস্থ মানুষও ধর্ষণ করছে। কেন? না, তার মানসিক শক্তির থেকে তাকে বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে যৌনতা। যৌনতা একটা সাংঘাতিক বিভৎস মাদক। মানুষকে তুমি সব নেশা থেকে সরাতে পারবে যৌনতা থেকে নয়। আর সেই যৌনতার কোন ছায়া থাকবে না তোমার কোন লেখায়?’
আলো ঝলমলে কফিশপে বসে অনির্বাণের চোখ দু’টো বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে। সংগীতা এসব কি বলছে! অবশ্য মিথ্যে কিছু বলছে না। দিন দিন ধর্ষণ বিভৎস রূপ নিয়ে দেখা দিচ্ছে কাগজে সংবাদে।
‘কি গো খাবার তো এলো না? সেই কোন সকালে ইউনিভার্সিটিতে গেছি, এখন আটটা বাজতে চলল, খিদেয় আমার পেট ফেটে যাচ্ছে।’
অনির্বাণ উঠতে যাচ্ছিল, তখনই বয়টি খাবার সার্ভ করল।
সংগীতা ক্ষুধার্ত মানুষের মতো খাওয়া শেষ করে বলল, ‘একি তুমি তো খেলে না?’
‘খাবো। দেখছিলাম, প্রচণ্ড খিদে পেলে কেমন করে খায় মানুষ!’
‘তোমাকে আরও অনেক কিছু দেখতে হবে। এবার একটা কফি বলো। তোমার কাছে আর একটা সিগারেট হবে?’
‘তুই তো বেশ সিগারেট খাস।’ অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটা সিগারেট এগিয়ে দিল অনির্বাণ।
ক্রমশ…
… সবচেয়ে সুন্দর কমেন্টদাতার জন্য রয়েছে সপ্তাহের শেষে বিশেষ সম্মান …
গল্পটি এখনই সম্পূর্ন পড়তে হলে চলে যান নিচের বক্সে দেওয়া ঠিকানায় :
প্রকাশক : শৌভিক দে
প্রকাশনার তারিখ : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১