পাঁচশো টাকার নোট (পর্ব : ০১) : কাজী আব্দুল হালিম সানি

মি কী তোমার গাল একটু স্পর্শ করতে পারি?”

মেয়ে মানুষের নাম জিজ্ঞেস করা কি সত্যিই ইভটিজিং?

মেয়েটি কাঁদতে শুরু করল, লোকজন জড়ো হলো, পুলিশ এলো, এবার কি করবে সে! জানতে হলে পড়তে হবে গল্পটি ...



“পাঁচশো টাকার নোট”
প্রথম পর্ব


Img. Loading...

 অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরে সর্বাধিক বাৎসরিক ভিউপ্রাপ্ত লেখাটির জন্য থাকবে আকর্ষণীয় উপহার, এছাড়া সর্বাধিক কমেন্টপ্রাপ্ত লেখাটির জন্য রয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায় সরাসরি জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ। আপনিও লেখা পাঠাতে পারেন উপরের মেনুবারে দেওয়া অপশনে  গিয়ে। বিশদে জানতে যোগাযোগ করুন এই নম্বরে: 8013850709


 সংলগ্ন তথ্য : 

ব্লগে লিখুন
এখন আপনিও খুব সহজে নিজের লেখা প্রকাশ করতে পারবেন
অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরে
লেখককে লিখুন
গল্পটি পড়ে লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
মেইল আইডি : kaziabdulhalimsunny01@gmail.com
©️ কপিরাইট
লেখক এবং প্রকাশকের অনুমতি ছাড়া গল্পটির কোনোরূপ ব্যবহার বরদাস্ত করা হবে না,
প্রয়োজনে ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


  • অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তর
  • সর্বশেষ আপডেট : ৩ রা নভেম্বর, ২০২০
  • শৌভিক দে

কী কী পড়বেন ?



“পাঁচশো টাকার নোট  একটি ধারাবাহিক রচনা এখন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আপনি পড়তে পারবেন অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরে । লেখাটি আমাদের দিয়েছেন আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের একজন তরুণ গল্পকার তথা লেখক কাজী আব্দুল হালিম সানি  মহাশয়। গল্পটি নিজেরা পড়ুন এবং অন্যদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দিন শেয়ারের মাধ্যমে।


নাম : কাজী আব্দুল হালিম সানি 
✓ বয়স :  ১৮
✓ জন্মস্থান : সুনামগঞ্জ, চন্দ্রপুর গ্রাম, তাহিরপুর উপজেলা, বাংলাদেশ
✓ মেইল আইডি : kaziabdulhalimsunny01@gmail.com 
✓ সম্পর্ক : লেখকের সাথে অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরের পথ চলা শুরু হলো এই ধারাবাহিক গল্পটির হাত ধরে। আশা করি, এই সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং দর্শকদের কাছে সুমধুর সম্পর্কের রূপ নেবে।

অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তর খুব দারুণ কাজ করছে। সাহিত্যে এই ধরণের কাজ আরো বেশি প্রয়োজন। সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে সাহিত্যিকদের সম্মান করা প্রয়োজন। তাদের লিখার যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত। অনেক নবীন লেখকরা লেখা প্রকাশ করার উপযুক্ত জায়গা খুুঁজে পান না। অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তর তাদেরকে নিয়েও দারুণ সব কাজ করছে। অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরের প্রতি ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো।।


  • প্রয়োজনীয় ট্যাগ :  অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তর, ধারাবাহিক গল্প, কাজী আব্দুল হালিম সানি, অনলাইন গল্প,  বাংলা সাহিত্য, পাঁচশো টাকার নোট, প্রথম পর্ব, ই-স্টোরি।




"আমি কি তোমার গাল একটু স্পর্শ করতে পারি?"

স্পিতা ভেবাচেকা খেয়ে গেল। সে হয়তো কখনও আশা করেনি আমি এমন কিছু বলবো।
কিছুক্ষণ নিরবতার পর সে বলল, “আসলে দেখছেন তো কি গরম। রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। দেখেন আমার পুরো শরীর ঘামছে। গালেও প্রচন্ড ঘাম।”

“গালে ঘাম বলে কি ধরা যাবে না?”

“না আসলে আমি চাচ্ছিলাম না আমার গালের ঘাম আপনার হাতে যাক।”

“ব্যাপার না। আমার হাতও ঘামে। তা অনুমতি কি পেলাম?”

স্পিতা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো। কতটা সম্মতি ছিলো তা বলা মুশকিল।
আমি আগ্রহ নিয়ে তার গাল স্পর্শ করলাম। কি আশ্চর্য! মনে হচ্ছে আমি কোনো তুলতুলে নরম খরগোশকে স্পর্শ করলাম।
স্পিতা একটু হুচট খেলো। চোখ বন্ধ করে ফেললো। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি এই প্রথম তাকে কোনো পুরুষ মানুষ স্পর্শ করলো।

একটা চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম। এটা কি ধরনের দুঃস্বপ্ন! আমি মেয়ে দেখলেই সবসময় পালিয়ে বেড়াই। সেই আমি কিনা ইচ্ছাকৃত কোনো মেয়ের গাল স্পর্শ করতে চাইবো!
আর সবচেয়ে বড় কথা হলো স্পিতা। এই নামের কোনো মেয়েকে তো আমি চিনি না। এই নামে কেউ থাকতে পারে বলেও তো আমার জানা নেই।

অনুজের সাথে দেখা করতে হবে এগারোটা দুই মিনিটে। সময়টা আমার সিলেক্ট করা। দুই সংখ্যাটায় আমার বেশ দূর্বলতা আছে। আমি যা কিছু কিনি সব দুইটা দুইটা করে কিনি। কোনো কিছু একটা থাকলেও সংখ্যার সম্মান রক্ষার্থে আরেকটা নিয়ে আসি। আমার অনেক ধরনের পাগলামী আছে। তার ভেতর এটি একটি।
জিন্দাবাজারে হাঁটছি। হঠাৎ চোখে পড়লো এক রোগা পাতলা গড়নের তরুণী। আমার স্বপ্নে দেখা সেই তরুণীর সাথে শতভাগ মিল। যাবো কি না তা চিন্তা করার দুই সেকেন্ডে সীদ্ধান্ত নিলাম, যাবো। গেলাম তার কাছে। 
গিয়ে বললাম, “আপনার নাম কি স্পিতা?”

সে মৃদু বিরক্ত হয়ে বললে, “আজ্ঞে না।”

“তাহলে আপনি কে?”

"এটা জানা কি আপনার খুব দরকার?"

“আচ্ছা বলতে হবে না”, বলে চলে আসছিলাম। আবার গেলাম।

“আচ্ছা স্পিতা নামে কি কেউ আছে আপনার পরিচিত?”

“না নেই।”

“এই নামের অর্থ কি জানেন?”

“ভারী বিরক্তকর তো আপনি! যান বিদেয় হোন তো এখান থেকে।”

আমি চলে আসছিলাম। উনি ডাকলেন, গেলাম কাছে।

"মেয়েদের সাথে অযথা কোনো অজুহাত দেখিয়ে কথা বলতে আসাটাও এক ধরনের ইভটিজিং, রাস্তায় কোনো মেয়ে দেখলে 'আপনি খুব সুন্দর' বলাটাও ইভটিজিং, 'আপনার নাম কি স্পিতা' জিজ্ঞেস করাটাও ইভটিজিং”, উনি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন। 
মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে। একটা সময় সবাই এসে এই তরুণীকে জিজ্ঞেস করছে, “আপু কি হইসে একবার খালি বলেন, বাকিটা আমরা দেখতেসি।”

সাহায্যের জন্যে সবসময় দশধাপ এগিয়ে থাকে তারা। তাদের প্রধান কাজ হলো, রাস্তাঘাটে কোথায় কোন মেয়ে বিপদে পড়ছে তা দেখা। দেখামাত্রই সাহায্যের জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়া।
বুঝলাম অবস্থা খুব খারাপ। 
মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পুলিশ চলে আসলো।
তরুণীটি কান্না শুরু করলো। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ধরতে পারলাম না সে কেন কান্না করছে। পুলিশ সান্ত্বনা দিচ্ছে তাকে। আমায় নিয়ে আসা হলো হাজতে। জীবনের প্রথমবারের মতো হাজতে আসলাম।
 আমি কোনো কথাই বলছি না। খুব বড় রকমের শক খেলাম। আমি কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি মেয়েটির সাথে।
ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের প্রতি আমার অনীহা। তীব্র রকমের অনীহা। তাদের কিছু কর্মকান্ড ছোটবেলায় আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। এখনও অনেকে দেয়। আমি কাউকেই কিছু বলি না। কারণ, আমার বলার মতো কেউ নেই।

দারোগা সাহেব আসলেন, “বাবা কি করেছো তুমি?”

আমি বেশ অবাক হলাম। কি করেছি না জেনেই আমাকে হাজতে ঢুকানো হলো। ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করছেন কি করেছি! 

“স্যার, আমি উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে স্পিতা নাকি উনি। উনি জানালেন তিনি স্পিতা নন। তারপর জিজ্ঞেস করলাম এই নামে কাউকে চিনেন কি না! তারপরও তিনি না করলেন।”

" তারপর কি আর কিছু জিজ্ঞেস করেছিলে?"

“জি।”

“কি জিজ্ঞেস করেছিলে?”

“আচ্ছা স্যার। আপনি কি আমায় স্পিতা নামের অর্থ কি বলতে পারবেন?”

“না তো পারবো না।”

“উনার উত্তরটাও এমন ছিলো।”

দারোগা সাহেব বেশ অবাক হলেন। 

“স্যার যদি অনুমতি দেন একটি প্রশ্ন করবো।”

“করো।”

“আপনি আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছেন কেনো? আমিতো একজন আসামী।”

“তোমাকে দেখে আসামী মনে হয় না। তুমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের কেউ। অনেক ব্যাক্তিত্ববান মনে হচ্ছে।”

“স্যার। আপনার ধারণা সত্য নয়। ব্যাক্তিত্ববান কেউ রাস্তায় দাড়িয়ে ইভটিজিং করে না। আর আমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের কেউ নই। আমার বাবা একজন দর্জি আর মা প্যারালাইজড। আমি পড়াশোনার জন্যে সিলেটে থাকি। এমসি কলেজে পড়ছি। অনার্স তৃতীয় বর্ষ। থাকি মেসে।”

“সাবজেক্ট কি তোমার?”

“বাংলা।”

“তুমি টিউশনি করাও?”

“জি স্যার। বুঝলেন কি করে?”

“এমনি অনুমান করেছি, আমার একটা মেয়ে আছে। ক্লাস ফাইভে পড়ে। পড়াবে ওকে?”

“স্যার আপনি তো দেখলেনই আমি রাস্তায় মাঝখানে একটি মেয়েকে ইভটিজিং করলাম। তাও আমার কাছে পড়াবেন মেয়েকে?”

“হ্যাঁ তাও পড়াবো। পড়াবে তাকে?”

“না স্যার আমি তাকে পড়াবো না।”

" কেন?"

“আমি আপনাকে বলতে পারবো না স্যার।”



এখন বাজে রাত দশটা।

“অনেক রাত তো হয়ে গেলো। বাসায় যাবে না?”

“স্যার আমার যেতে ইচ্ছে করে না। আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। বাড়িতেও না। মেসেও না।”

“কেন?”

“বাড়িতে গেলে দেখি আমার অসুস্থ মা আর্তনাদ করছেন। মেসে গেলে একাএকা নিঃসঙ্গতা পোহাতে হয়। কথা বলার মতো কেউ নেই স্যার। জানেন আমার কথা বলতে বড্ড ভালো লাগে। কিন্তু কারো সাথেই কথা বলতে পারি না। কেউ শুনে না আমার কথা।”

"মেসে কেউ চিন্তা করবে না? না গেলে?"

“না স্যার, করবে না। কিন্তু, আজ আমার বাবা আসবে। উনি চিন্তা করবেন।”

"তোমায় দেখতে আসবেন?"

“না। আমি এখন টাকা পাঠাতে পারছি না কয়েকদিন যাবৎ। টিউশনি যেটা করতাম বাদ দিয়েছি। তাদের কলও ধরছি না। কি বলবো ধরে? আমি টাকা পাঠাতে পারছি না, বাবা!”

দারোগা সাহেব আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।

“স্যার। আপনি কি সত্যিই পুলিশ?”

"তোমার সন্দেহ হচ্ছে?"

“নাহ। একজন আসামীর সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে না। আর গল্প করা তো অসম্ভব ব্যাপার।”

উনি হাসলেন। দেখলাম উনার হাসি বেশ সুন্দর। 

"তুমি জিজ্ঞেস করলে না যে কেনো তোমায় ধরলাম আমি?"
 
“আমি জানি স্যার।”

"কেন ধরেছি বলো।"

“পাবলিকের মার যাতে না খেতে হয়।”

"তোমার বুদ্ধি ভালো।", উনি উঠে গেলেন। একটু পর একটি হলুদ রঙের খাম নিয়ে আসলেন।

"এই খামটা নাও। এইটা তোমার জামিনপত্র। মেসে গিয়ে খুলে দেখো। "

“স্যার। আমার জামিন কে করালো?”

"স্পিতা নামের একজন তরুনী এসে তোমার জামিন করিয়ে গেলো।", দারোগা সাহেব খুব লেইম একটি রসিকতা করলেন। ধরে ফেললাম। তাই হাসি পেলো না।
আমি চলে যাচ্ছিলাম। আবার ফিরে এসে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“স্যার আপনার মেয়ের নাম কি স্পিতা?”

"জগতে কিছু বাবা থাকেন যাদের সন্তানের কোনো নাম থাকে না। আমি ওরকম একজন বাবা।"

আমি হাঁটছি মেসের উদ্দেশ্যে। শীত লাগা বাতাসটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আর দারোগা সাহেবকেও ভীষণ ভালো লেগেছে। জীবনে এই প্রথম কেউ আমার কথা মন দিয়ে শুনলো। আমিও মন খুলে কথা বললাম।
এই যা! 
দারোগা সাহেবের নামটাই তো জানা হলো না। থাক গে। নাম দিয়ে কি আসে যায়। উনি হলেন স্পিতার বাবা। এখন থেকে মাঝে মধ্যে হাজতে যেতে হবে। দারোগা সাহেবের সাথে গল্প করা লাগবে।

বাবা বসে আছে ফ্লোরে। আমি খামটা রেখে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম। 
বের হতেই বাবা বললেন, এই টাকাটা খুব দরকার ছিল রে এখন। তোর মায়ের অবস্থা খুব খারাপ।

লক্ষ্য করলাম, বাবার হাতে পাঁচশো টাকার তিনটে নোট। 
আমি চিন্তা করছি আমি যে ইভটিজিং করলাম সেই মেয়েটার কি অবস্থা? 
বাসায় চলে গেছে তো?
আচ্ছা সে কান্না করছিল কেন?

(পরবর্তী পর্ব শীগ্রই আসছে...)


-: চলবে :-

কাজী আব্দুল হালিম সানি বাবুর লেখা গল্পটি পড়ে আপনার যদি ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই পোস্টের নিচে কমেন্ট করে জানাবেন আমাদের, যাতে করে উনি নিত্য নতুন লেখা আমাদের ব্লগে লেখেন। ব্লগে আরও নিত্য নতুন গল্প-কবিতা সকলের আগে পড়তে এবং বিজ্ঞাপন এড়াতে অলীক চেতনা পত্রিকা দপ্তরকে এখনই সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
এখন নিচের শেয়ার অপশনগুলি থেকে শেয়ার করে অন্যদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দিতে পারেন আপনি।

প্রকাশক : শৌভিক দে
প্রকাশনার তারিখ : ৩রা নভেম্বর,২০২০

Souvik Dey

Hello. My name is Souvik Dey. I am a B.Tech. 4th year student. I did my diploma in civil engineering and currently pursuing BTech in Computer Science. My team and I run this blog together. Don't forget to share these articles with your friends. Thank you.

Post a Comment

Thank you for your valuable time.
We are fond of your comments.(but, do not spam)

Previous Post Next Post